রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ অনলাইন ডেস্ক : ডলারের দাম ও পরামর্শক খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে ১৫ মাস পিছিয়ে যাচ্ছে ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম হাইস্পিড ট্রেন নির্মাণের উদ্দেশে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন’ প্রকল্প। এর ফলে এই রুটে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের জন্য মূল প্রকল্প প্রণয়নে আরো অপেক্ষা করতে হবে।
চুক্তি
অনুযায়ী, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ডিজাইন কর্পোরেশন (চায়না) এবং
বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজকে ডলারে পরামর্শক ব্যয় পরিশোধ করতে হবে।
এখন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সমীক্ষা প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের ১৮ মার্চ সমীক্ষা প্রকল্পটি
অনুমোদন করা হয়। একই বছরের ৩১ মে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়।
বর্তমানে সমীক্ষাটি চলছে। এটি সম্পন্ন হলে প্রথমবারের মতো ঢাকা-চট্টগ্রামের
মধ্যে দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন চালু হবে।
সমীক্ষা প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১০০ কোটি ৬৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের ০১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চেল মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা।
অর্থাৎ সমীক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২ বছর ৩ মাস। ২০১৭ সমীক্ষা
প্রকল্পে পরামর্শক সেবা বাবদ মোট ব্যয় ছিল ৯৭ কোটি ৪১ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
তখন বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের সঙ্গে টাকার
বিনিময় হার ধরা হয়েছিল ১ মার্কিন ডলার সমান ৭৮ টাকা ৪০ পয়সা।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ১ মার্কিন ডলার ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা খরচ
করে কিনতে হচ্ছে। ফলে এই খাতে অতিরিক্ত ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বাড়ছে।
সার্বিকভাবে সমীক্ষা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই টাকা সমন্বয় করতে প্রকল্পের মেয়াদ ১৫ মাস বাড়ছে। ফলে এখন প্রকল্পের সময় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান আ ন ম আজিজুল হক বলেন, সমীক্ষা প্রকল্পটি চুক্তির সময় ডলারের একটা রেট ধরা হয়। তবে সেই রেট এখন নাই। ফলে ব্যয় একই থাকার কথা নয়। প্রকল্পে চায়না ও জাপানের পরামর্শক রয়েছে। তাদের ডলারে ব্যয় পরিশোধ করতে হয়।
‘প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সমীক্ষা করার কথা ছিল। এখন ঢাকা
থেকে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সমীক্ষা করতে হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কম সময়েই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে ভ্রমণ করা
যাবে।’
যোগাযোগকরা হলে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। প্রস্তাবিত রুট
অনুযায়ী, এর দৈর্ঘ্য ৯১ কিলোমিটার কমে ২৩০ কিলোমিটার হবে। ২৫০ কিলোমিটার
গতির ট্রেন চালানোর মাধ্যমে এক ঘণ্টার কম সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা যাওয়া
করা যাবে। এতে দ্রুত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। দেশের অর্থনীতির
উন্নয়নে এই ট্রেন সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন (চীন) এবং
মজুমদার এন্টারপ্রাইজ (বাংলাদেশ) যৌথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নকশার কাজ
করছে। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন অবকাঠামোর বিশদ ডিজাইন প্রণয়ন, দরপত্র
দলিলাদি প্রস্তুতকরণ, নতুন রেললাইন পরিচালন প্রক্রিয়া নির্ধারণ, প্রাথমিক
পরিবেশ পরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি, প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন,
পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বসান পরিকল্পনাও
চলমান।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে সেকশন বাংলাদেশ
রেলওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করিডর। বর্তমানে ঢাকা থেকে ট্রেন বৃত্তাকার
পথে টঙ্গী-ভৈরববাজার-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম ভ্রমণে অনেক
বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।
অনেক সময় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। প্রস্তাবিত দ্রুতগতির রেলপথটি যাবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মধ্য দিয়ে। এই পথে ঢাকা থেকে কুমিল্লা/লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেন লাইন নির্মাণ করা হলে সময় ও পথ কমে যাবে।